এম.আর, মাহমুদ, চকরিয়া ::
একসময়ের অভিভক্ত চকরিয়ার ঐতিহ্যবাহী কাকারা ইউনিয়ন ও নবগঠিত সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের অর্ধলক্ষধিক মানুষের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম চিরিংগা-মানিকপুর-কাকারা-মাঝেরফাঁড়ি সড়কের দুটি অংশের অবস্থা বড়ই বেহাল। যাতায়াতের ক্ষেত্রে ওই দুই ইউনিয়নের লোকজন চরম দুর্ভোগে আছে। সড়ক দুটির অবস্থা দেখলে মনে হবে এ দুটি যেন সড়ক নয়, যুদ্ধ বিধ্বস্থ জাপানের হিরু সীমা। অভিভক্ত কাকারা ইউনিয়নের অতি পুরনো সড়কটির করুন অবস্থা দেখলে যেন প্রিয় কণ্ঠশিল্পী এন্ডো কিশোর এর সেই গানটির প্রথম কলি স্মরণ হয়- “কারো বুঝাবো মনের দুঃখ গো, বুক চিরিয়া” হযরত শাহ্ ওমর (রঃ) পুণ্য ভুমি কাকারার ঐতিহ্য চকরিয়া ঘোড় দৌড় মেলা এখন আর বসেনা। মানিকপুরের মহিষের দই প্রায় বিলুপ্ত। পাহাড় জুড়ে নেই শতবর্ষী গর্জনসহ হরেক প্রজাতির বৃক্ষ। স্বীয় ঐতিহ্যে দাড়িয়ে আছে মানিকপুরের কিউকের প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ও বেশ কটি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ক্যাং। আগে সকালে মসজিদে মোয়াজ্জিনের সু-মধুর কন্ঠের আজানের পর হরেক প্রজাতির পাখি শিয়ালসহ হরিণের ডাক এখন আর শুনা যায়না। শুধু শুনা যায় মোয়াজ্জিনের সুললিত কন্ঠের আযানের ধ্বনি। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ ছিল কৃষক। সিংহ ভাগ পরিবারের গোয়ালে গরু-মহিষ, গোলায় ধান ছিল। কালের বিবর্তনে এসব অনেকটাই বিলুপ্ত।
এই ইউনিয়নের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে কাকারা ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্ট মরহুম মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, যিনি চকরিয়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, চকরিয়া ঘোড় দৌড় মেলার প্রবর্তক, সাহিত্যিক সাংবাদিক আবদুর রশিদ ছিদ্দিকী, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন চৌধুরীর মত মহৎ ব্যক্তিরা নেই। কিন্তু শিক্ষা বিস্তারে তাদের ভুমিকা ও স্মৃতিগুলো আজো বিদ্যমান। আজ তারা থাকলে হয়তো অনুসুচনা করত- কেন আমরা কাকারার মত একটি ইউনিয়নে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম। অভিভক্ত কাকারা ইউনিয়ন ভেঙ্গে বমুবিলছড়ি, সুরাজপুর-মানিকপুর ২টি পৃথক ইউনিয়ন ও হালকাকারা গ্রামকে পৌরসভাভুক্ত করা হয়েছে। অভিভক্ত কাকারা ইউনিয়নকে বর্তমানে তিনটি ইউনিয়নে পরিণত করলেও মুল কাকারা ইউনিয়নের আশানরুপ পরিবর্তন হয়নি। প্রতি বছর মাতামুহুরী নদীর বন্যার তান্ডবে বেশিরভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। এছাড়া মানুষের চলাচল উপযোগী রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কাকারা ও সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির শিকার হয়। রাস্তাঘাট সংস্কারের পর ৬ মাস শান্তিতে চলাফেরা করলেও বর্ষার পর বাকী ৬ মাস চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে চলাফেরা করলেও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থীদের অবস্থা বর্ণনা করারমত নয়। বিশেষ করে কাকারা মাঝেরফাঁড়ি সড়কের পালপাড়া, মাহাবু মিয়ার টেকে হাটু সমান বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে শিক্ষার্থীসহ পথচারীরা কি যে কষ্টে আছে ভুক্তভোগীছাড়া কারো পক্ষে বুঝা সম্ভবনয়। এখানে যতদিন পর্যন্ত ড্রেনের ব্যবস্থা করা করা হবেনা ততদিন পর্যন্ত মানুষের দুর্ভোগ কমবেনা শুধু বাড়তেই থাকবে। অপরদিকে চিরিংগা-মানিকপুর সড়কের বাদশা মিয়ার টেক হয়ে মাঝেরফাঁড়ি পর্যন্ত সড়কের অবস্থা দেখলে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য অমঙ্গলের প্রতীক “হুতুম পেচা”র মাথারমত খানা-খন্দকে ভরপুর। কাকারা শাহ্ ওমর পাহাড়তলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমদ দুঃখ করে বলতে শুনা গেছে- পুরো কাকারা ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম কাকারা মাঝেরফাঁড়ি সড়ক ও চিরিংগা-মানিকপুর সড়কের, বাদশা মিয়ার টেক হতে মাঝের ফাঁড়ি পর্যন্ত সড়কের অংশ বড়ই করুন। শতাধিক খানা খন্দকের কারণে গাড়ী চলাচলতো দুরের কথা পায়ে হাটাও কষ্টকর। ফলে গাড়ী যোগে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে প্রতিনিয়তই চরম দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। সড়ক গুলোর অবস্থা দেখলে যে কেউ বলবেৃ কাকারা যেন অভিভাবকহীন একটি ইউনিয়ন। এ সড়ক দিয়ে গর্ভবতী কোন মহিলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়ার পথে “গর্ভ খালাসের” সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই অনেকে বিদ্রোপ করে বলাবলি করতে শুনা যায়- কাকারার সড়ক গুলোর নাম যেন ‘গর্ভখালাস সড়ক’ হিসেবে নাম করণ করলে যথার্থ হত। বিশেষ করে গেল বর্ষার বন্যার পরে পুরো কাকারার বেশিরভাগ সড়ক তছনছ হয়ে পড়েছে। সড়কগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার বা পুণঃ নির্মাণ না করলে কাকারা ইউনিয়নের সিংহভাগ মানুষের দুর্ভোগ কোনদিনই লাগব হবেনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রবীণ মুরব্বী মন্তব্য করেছেন- কাকারা ইউনিয়নের সড়কগুলোর অবস্থা পরিবর্তন না হলে এখানকার সাথে আত্মিয়তার সম্পর্ক করতেও আগ্রহ হারাবে। এলাকাবাসী কাকারার হতশ্রী সড়কগুলো সংস্কারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
পাঠকের মতামত: